তালাক প্রদান পদ্ধতি ও তালাক রেজিস্ট্রি খরচ জানুন

তালাক প্রদান পদ্ধতি ও তালাক রেজিস্ট্রি খরচ জানুন।

Last Updated on 08/02/2023 by সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী বিপিএএ

তালাক আরবি শব্দ। এর অর্থ বিচ্ছিন্ন করা, পরিত্যাগ করা, ছেড়ে দেয়া, সম্পর্ক না রাখা ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবাহ বিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়। ইসলামী শরিয়া আইন অনুসারে স্বামী স্ত্রীকে সর্বাবস্থায় তালাক দিতে পারেন। স্ত্রী শুধুমাত্র তখনই স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন, যদি বিয়ের সময় বিয়ের কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে  স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদানের লিখিত ক্ষমতা দেওয়া হয়। অবশ্য অনুমতি দেয়া না থাকলেও সুনির্দিষ্ট কিছু কারনে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন।

তালাক প্রদানের জন্য মুখে তালাক শব্দটি উচ্চারণ করতে হবে। পাশাপাশি তালাক প্রদানের কারণ সম্বলিত লিখিত নোটিসের একটি কপি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের নিকট ও একটি কপি তালাকপ্রাপ্ত (স্বামী/স্ত্রী) কে পাঠাতে হবে। নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান বা চেয়ারম্যানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সালিশি কাউন্সিল গঠন করে দুই পক্ষের মধ্যে মিমাংশা তথা পুনঃমিলনের চেষ্টা করবেন। যদি দুই পক্ষের মধ্যে কোনোভাবেই মিমাংশা বা পুনঃমিলন সম্ভব না হয়, তবে তালাকের নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে ৯০ দিন অতিবাহিত হলে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। উল্লিখিত ৯০ (নব্বই) দিন স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচ বহন করতে হবে। এই ৯০ দিনের মধ্যে স্ত্রীর সন্তান সম্ভাবনা বা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। তালাক স্বামী বা স্ত্রী যেই দিক না কেন, স্ত্রী মোহরানা যে কোনও সময় দাবী করতে পারেন এবং স্বামী তা পরিশোধ করতে আইনত বাধ্য। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ না দেন, তাহলে তার এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ড হতে পারে। তালাক স্বামী বা স্ত্রী যেই দিক না কেন, স্ত্রী যে কোন সময় মোহরানা দাবী করতে পারেন এবং স্বামী তা পরিশোধ করতে আইনত বাধ্য।

মনে রাখতে হবে যে, তালাক রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক এবং তালাক কার্যকর হওয়ার পর (আগে নয়) তালাক রেজিস্ট্রি করতে হয়। মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৯ এর ২৩ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে, তালাক রেজিস্ট্রি করিবার পূর্বে নিকাহ রেজিস্ট্রার এই মর্মে সন্তুষ্ট হইবেন যে, তালাক রেজিস্ট্রির জন্য আগত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ প্রকৃতপক্ষে তালাক কার্যকরী করিয়াছেন এবং এইরূপ সন্তুষ্টির জন্য উক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে জিজ্ঞাসাবাদ করিবেন, তবে উক্তরূপ কোন ব্যক্তি পর্দানশীল মহিলা হইলে, তাহার পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত উকিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে হইবে। এই বিধিমালার ২৫ নং বিধি অনুসারে, যে স্থানে তালাক সম্পন্ন হইয়াছে, উক্ত স্থান যে নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজীর) এলাকাভুক্ত, সেই নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজীর) দ্বারা তালাক রেজিস্ট্রি করাতে হবে।

কোন তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী পুনরায় বিবাহ করতে চাইলে, তিনি গর্ভবতী কিনা অর্থাৎ তার গর্ভে তার পূর্ব স্বামীর সন্তান আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে পরপর ৩টি পূর্নাঙ্গ ঋতুকালীন সময় পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। এই সময়ে গর্ভ সঞ্চারের লক্ষণ প্রকাশিত না হলে তিনি ইদ্দত শেষ করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারেন।


বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী বিবাহিত কোন মহিলা নিচের যে কোন কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।

  • চার বছর পর্যন্ত স্বামীর কোনও খোঁজখবর পাওয়া না গেলে।
  • দুই বছর যাবত স্বামী কর্তৃক অবহেলিত এবং স্বামী ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।
  • মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১’র বিধান লঙ্ঘন করে স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করলে।
  • স্বামী ৭ বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্য কারাদন্ডে দন্ডিত হলে।
  • স্বামী কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই তিন বছর ধরে দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
  • বিয়ের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন হলে এবং এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে।
  • দুই বছর ধরে স্বামী অপ্রকৃতিস্থ (পাগল) থাকলে, কুষ্ঠ রোগ বা সংক্রামক ব্যাধিতে ভুগলে।
  • ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই যদি অভিভাবকের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয় এবং স্বামী-স্ত্রী সহবাস বা বসবাস না করে, তাহলে ১৯ বছর বয়স হওয়ার আগেই এই বিয়ে প্রত্যাখ্যান করলে।
  • এছাড়া স্ত্রীর প্রতি স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে। এক্ষেত্রে নিষ্ঠুর আচরণগুলো হল:
    • স্বভাবগতভাবে তাকে মারপিট বা, শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও নিষ্ঠুর আচরণ করে স্ত্রীর জীবন দুর্বিষহ করে তুললে।
    • খারাপ চরিত্রের মহিলাদের সঙ্গে মেলামেশা করলে বা অনৈতিক জীবনযাপন করলে।
    • স্ত্রীকে অনৈতিক জীবনযাপানে বাধ্য করার চেষ্টা করলে।
    • স্ত্রীর সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করলে বা, তার স্ত্রীর সম্পত্তির অধিকারে বাধা প্রদান করলে।
    • স্ত্রীর ধর্মকর্ম পালনে বাধা দিলে।
    • একাধীক স্ত্রী থাকলে পবিত্র কোরআনের বিধান মোতাবেক সমভাবে আচরন করতে ব্যর্থ হলে।

উপরে উল্লিখিত কারনে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে তালাকের ক্ষমতা না থাকা সত্বেও স্ত্রী, তার স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারেন। তবে স্ত্রীকে এক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে স্বামীকে তালাক দিতে হবে।

তালাক রেজিস্ট্রি খরচঃ

১০ আগস্ট, ২০০৯ তারিখের ২০১-আইন/২০০৯ নং এস,আর,ও, অনুযায়ী মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) গণ নিম্নরূপ হারে ফি আদায় করতে পারেঃ 

তালাক রেজিস্ট্রি ফি: ৫০০ টাকা।


নকল প্রাপ্তি ফি: ৫০ টাকা।


যাতায়াত ফিঃ প্রতি কিলোমিটার- ১০ টাকা।

সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী বিপিএএ

Add comment

error: Content is protected !!