দলিল রেজিস্ট্রি পদ্ধতি এবং রেজিস্ট্রির ধাপসমুহ

দলিল রেজিস্ট্রি পদ্ধতি এবং রেজিস্ট্রির ধাপসমুহ

Last Updated on 14/07/2025 by সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী পিএএ

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহঃ-  রেজিস্ট্রি অফিসে মানুষের প্রয়োজন অনুসারে অনেক প্রকার দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। সকল দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে একই ধরনের কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না।

ক্রেতা-বিক্রেতার সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবিঃ প্রায় সব দলিলের ক্ষেত্রে দলিলের ক্রেতা-বিক্রেতা, দাতা-গ্রহিতার সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি (স্টাম্প সাইজের ছবি কিংবা পুরাতন ছবি কোন ভাবেই চলবে না) লাগে। 

জাতীয় পরিচয়পত্রঃ ক্রেতা-বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র বা বৈধ পাসপোর্ট (মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট চলবে না) অথবা কোন যৌক্তিক কারণে এই দুইটির একটিও না থাকলে বিশেষ ক্ষেত্রে (সাধারণত নাবালকের জন্য) জন্মসনদপত্র প্রয়োজন হয়। 

জরিপ খতিয়ানঃ সি.এস, এস.এ, আর.এস, বি.এস, দিয়ারা, সিটি জরিপ এগুলো হলো জরিপ খতিয়ান। দলিলের তফসীলে যে জরিপ খতিয়ান উল্লেখ করবেন, সে খতিয়ান লাগবে। 

নামজারি (Mutation)/খারিজ খতিয়ানঃ দলিলে উল্লিখিত ভূমি নামজারি করা হয়ে থাকলে দলিল রেজিস্ট্রির সময় ঐ খতিয়ানের কপি লাগবে। 

বায়া দলিলঃ আপনি যে যে দলিলের মাধ্যমে ভূমির মালিকানা অর্জন করেছেন মর্মে আপনার খসড়া দলিলে উল্লেখ করেছেন, সে সে মূল দলিল বা মূল দলিলের সার্টিফাইড কপি (নকল) লাগবে। 

ভূমি উন্নয়ন করের রশিদঃ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর ৬(৩) ধারা অনুসারে ভূমি বিক্রয়, দান, হেবা বা অন্য কোন ভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে হাল নাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ লাগবে। 

ওয়ারিশ সনদঃ কোন মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ হিসেবে আপনি মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি বিক্রয় করতে চাইলে ‘ওয়ারিশ সনদ’ লাগবে। 

মৌজা ম্যাপ বা নকশাঃ দলিলে তফসীল অংশে, চৌহদ্দি অংশে বা হাত নকশা অংশে ‘রাস্তা’ উল্লেখ থাকলে, উল্লিখিত রাস্তা বিক্রেতা নির্মাণ করেন নাই তা প্রমাণের জন্য মৌজা ম্যাপ লাগবে। উৎসে কর বিধিমালা, ২০২৪ এর ২(চ) অনুসারে, ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার না হয়েও কোন ব্যক্তি ‘ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের অনুরূপ কার্যাবলী’ অর্থাৎ ‘২(চ)(আ) নিজের বা অন্যের ভূমির মধ্যে রাস্তা নির্মাণ পূর্বক ভূমি বিক্রয় বা হস্তান্তর করিলে’ তিনিও ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের মতো উৎসে কর প্রদান করবেন।

মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশনঃ আপনি কোন কোম্পানীর প্রতিনিধি হিসেবে কোন সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর বা দলিল রেজিস্ট্রি করাতে চাইলে ঐ কোম্পানীর সর্বশেষ মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন লাগবে। 

রেজুলেশনঃ কোন কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে চাইলে সে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের ‘রেজুলেশন’ লাগবে। 

পাওয়ার অব অ্যাটর্নিঃ আপনার নিজের না এমন কোন সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে চাইলে রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দলিল লাগবে।  

পি.এস.আর বা রিটার্ণ দাখিলের প্রমাণক: সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বা জেলা সদরের পৌরসভার অধীন যে কোন মূল্যের দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে পি.এস.আর বা রিটার্ণ দাখিলের প্রমাণক লাগবে। আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ২৬৪(২) ধারা অনুসারে, “রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক” বলিতে বুঝাইবে-(ক) রিটার্ন দাখিলের প্রত্যয়ন বা প্রাপ্তি স্বীকার পত্র; (খ) করদাতার নাম, টিআইএন এবং করবর্ষ সংবলিত সিস্টেম জেনারেটেড সার্টিফিকেট; বা (গ) করদাতার নাম, টিআইএন এবং করবর্ষ সংবলিত উপকর কমিশনার কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়ন।

ঋণ মঞ্জরীপত্রঃ আপনি কোন ব্যাংকের বন্ধক দলিল রেজিস্ট্রি করাতে চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত ‘ঋণ মঞ্জরীপত্র’ লাগবে।

অনেকে প্রশ্ন করেন, সকল দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে খারিজ/নামজারি/মিউটেশন (এই তিনটি প্রতিশব্দ) খতিয়ান লাগবে কিনা? এর উত্তর হচ্ছে না, সকল দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে লাগবে না। সর্বশেষ খতিয়ান সংক্রান্ত সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৩সি ধারা, রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৫২ক ধারা এবং পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন, ২০১২ এর ৬(১) ধারা কেবলমাত্র সাফ কবলা দলিল এবং অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে সর্বশেষ খতিয়ান বাধ্যতামূলক। তবে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর ৬(৩) ধারা মতে, নিজ নামে সর্বশেষ খতিয়ান ছাড়া ভূমি বিক্রয়, দান, হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করা যায় না। অবশ্য, এ ধারায় রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর বিধানাবলী বহাল রাখা হয়েছে।

বিভিন্ন আইনের উক্ত ধারাগুলোর মর্মার্থ হলো, ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল অর্থাৎ সাফ কবলা দলিল ও অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতা যদি দলিলে বর্ণিত সম্পত্তি উত্তরাধীকার ব্যতীত অন্য কোন ভাবে (যেমন, কোন দলিলের মাধ্যমে ইত্যাদি) পেয়ে থাকে তাহলে সর্বশেষ খতিয়ান বিক্রেতার নিজ নামে থাকতে হবে। বিক্রেতা যদি উত্তরাধীকার সূত্রে সম্পত্তি পেয়ে থাকে তাহলে পূর্বসূরির নামে বা নিজের নামে সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান থাকতে হবে।

সর্বশেষ খতিয়ান কি?: সাধারণত সর্বশেষ খারিজ/ নামজারি/ মিউটেশন খতিয়ান সর্বশেষ খতিয়ান। তবে খারিজ/ নামজারি/ মিউটেশন খতিয়ান সব সময় সর্বশেষ খতিয়ান নয়। এস.এ খতিয়ান; আর.এস খতিয়ান; বি.এস খতিয়ান; বি.আর.এস খতিয়ান; সিটি জরিপের খতিয়ান, দিয়ারা খতিয়ান ইত্যাদিও সর্বশেষ খতিয়ান হতে পারে। আপনার এলাকায় সর্বশেষ জরিপের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত এবং গেজেটভুক্ত খতিয়ান হচ্ছে সর্বশেষ খতিয়ান। তবে জরিপের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ানের পর যদি দলিল মূলে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর হয়, সেক্ষেত্রে ঐ সম্পত্তির খারিজ/নামজারি/মিউটেশন খতিয়ান হচ্ছে সর্বশেষ খতিয়ান। মনে রাখবেন, ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) যে খতিয়ান মূলে আদায় করা হয় সেটি সর্বশেষ খতিয়ান। 

তবে যে কোন দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে দাতা/বিক্রেতা সনাক্তকরণ, সম্পত্তির পরিচয়, সম্পত্তির মালিকানা ও হস্তান্তরের বৈধ অধিকার সম্বন্ধে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য রেজিস্ট্রারিং অফিসার আইনসঙ্গতভাবে যে কোন কোন কাগজপত্র চাইতে পারেন।  

পরামর্শঃ দলিল রেজিস্ট্রির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ক্রেতাকে সংগ্রহ করা উচিত।  বিক্রেতার নিকট থেকে জমির মালিকানা সম্পর্কিত কাগজপত্র যেমন, প্রয়োজনীয় বায়া দলিল, খতিয়ান (সি,এস,; এস,এ,; আর,এস, বা বি,এস,; নামজারি বা খারিজ ইত্যাদি; আপনার জন্য যেটি প্রযোজ্য), ভূমি উন্নয়ন কর (পূর্বে খাজনা নামে পরিচিত ছিল) পরিশোধের রশিদ, মৌজা ম্যাপ, পিএসআর, জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্মসনদপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করতে হবে। আপনার জমি-জমার কাগজপত্র সম্পর্কিত ভাল ধারণা না থাকলে প্রয়োজনে একজন সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখক বা আইনজীবীর পরামর্শ নিতে পারেন। 

দলিল প্রস্তুতকরণঃ- বিক্রেতার নিকট থেকে সংগৃহীত কাগজ-পত্র সঠিক পাওয়া গেলে খতিয়ান ও ম্যাপ অনুসারে জমির অবস্থান ঠিক আছে কিনা তা একজন আমিন দ্বারা মেপে দেখতে হবে। এরপর একজন দলিল লেখক বা আইনজীবীর মাধ্যমে দলিলের সরকার নির্ধারিত ফরমেট অনুসরণ করে দলিল প্রস্তুত করতে হবে। এজন্য জমি-জমার আইন কানুন এবং দলিল রেজিস্ট্রি সম্বন্ধে ভাল ধারণা আছে এমন একজন সরকারি সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখক বা আইনজীবী বাছাই করতে হবে। প্রয়োজনে দলিল লেখক বা আইনজীবী  সম্বন্ধে অধিকতর খোজ-খবর ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দলিলের পাশাপাশি সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে পাঠানোর জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরমেটে এল,টি নোটিশ (সম্পত্তি হস্তান্তর নোটিশ) লিখতে হবে।  

প্রস্তুতকৃত দলিলটি যাচাইকরণঃ- প্রস্তুত হয়ে গেলে দলিলটি ভালভাবে পড়ে দেখতে হবে যে, আপনার উদ্দেশ্য অনুযায়ী দলিলটি সঠিকভাবে প্রস্তুত হয়েছে কিনা। গ্রহিতা/ক্রেতার নাম, পিতার নাম, বিশেষ করে দলিলের ‘তফশীল’ অংশে মৌজার নাম, জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমান সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কিনা এবং ‘হাত নকশা’ অংশে সঠিকভাবে জমির ম্যাপ অনুসারে হাত অংকন করা হয়েছে কিনা। দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর এবং জমির পরিমাণ অংকে লেখার পাশাপাশি কথায় লেখা নিশ্চিত করতে হবে। আপনার দখল-ভোগ অনুসারে সঠিকভাবে চৌহদ্দি (আপনার জমির সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের জন্য চারপাশের জমি উল্লেখ করা) লিখতে হবে।   

দলিল সম্পাদনঃ ‘দলিল সম্পাদন’ অর্থ দলিলের দাতা/বিক্রেতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য দলিলের পক্ষগণ কর্তৃক দলিলের প্রতি পৃষ্ঠায় আড়াআড়িভাবে নাম-স্বাক্ষর করা। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে দলিলে লিখিত বিষয়বস্তু অনুমোদন করা হয়ে থাকে। নাম-স্বাক্ষর অর্থ আপনার পূর্ণ নাম (সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর নয়) দলিলের প্রতি পৃষ্ঠায় লেখা। এছাড়া সম্পত্তি হস্তান্তর দলিলের ১৭ নং কলামে নাম স্বাক্ষর এবং ৩ নং কলামের ক্রেতা/গ্রহিতার ছবি ও স্ট্যাম্পে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির টিপ এবং নাম-স্বাক্ষর করতে হয় (এমনভাবে টিপ ও নাম-স্বাক্ষর করতে হয় যাতে টিপ ও নাম অর্ধেক ছবিতে ও অর্ধেক স্ট্যাম্পে পড়ে)।

যে তারিখে দলিলটি সম্পাদন করা হয়, সেই তারিখকে সম্পাদনের তারিখ বলে। সাফ-কবলা, দানপত্র, দানের ঘোষনাপত্র, হেবার ঘোষণাপত্র, হেবাবিল এওয়াজ দলিলের ১০ (দশ) নম্বর কলামে সম্পাদনের তারিখ বাংলায় এবং ইংরেজিতে দিতে হয়। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের ১ (এক) নম্বর কলামে সম্পাদনের তারিখ দিতে হয়। অন্যান্য দলিল যেগুলোর সরকার নির্ধারিত কোন ফরমেট নেই, সেগুলোতে সুবিধামত যে কোন যায়গায় সম্পাদনের তারিখ দেয়া যায়।

সাধারণত কোন ব্যক্তি লিখতে পারলে তিনি নিজে দলিলের প্রতি পাতার নির্দিষ্ট স্থানে তার নাম লিখেন এবং লিখতে অসমর্থ হলে তার পক্ষে ঐ দলিলের সনাক্তকারী সম্পাদনকারীর নাম ব-কলমে দলিলের নির্দিষ্ট যায়গায় লিখে দেন এবং নিজের নামও স্বাক্ষর করেন।

সাফ কবলা, হেবার ঘোষনাপত্র, দানের ঘোষনাপত্র, দানপত্র, হেবাবিল এওয়াজ প্রভৃতি দলিল দাতা সম্পাদন করেন। কিন্তু বায়নাপত্র উভয় পক্ষকে সম্পাদন করতে হয় (রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ১৭(এ) ধারা অনুসারে)। বন্টননামা, বিনিময় প্রভৃতি দলিলে সকল পক্ষকে সম্পাদন করতে হয়।

রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল দাখিল করাঃ দলিল সম্পাদনের পর মূল দলিল; এল,টি নোটিশ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একসেট ফটোকপি এবং বিভিন্ন খাতে রেজিস্ট্রেশন ফি, কর ও শুল্ক পরিশোধের মূল পে-অর্ডার (একসেট ফটোকপিসহ) সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট দাখিল করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মূল কাগজপত্র সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক দলিল পরীক্ষা এবং সম্পাদনকারী (দাতা/বিক্রেতা বা অন্য পক্ষ) কর্তৃক সম্পাদন স্বীকার করার পর রেজিস্ট্রি অফিসে রক্ষিত ‘টিপের বহি’তে সম্পাদনকারীর বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির টিপ গ্রহণ করা হয়। এভাবে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল গ্রহণ করার পর দলিলের দাখিলকারী বা দাখিলকারী কর্তৃক মনোনীত অন্য কোন ব্যক্তিকে ‘৫২ ধারার রশিদ’ প্রদান করা হয়। এই রশিদ সযত্নে সংরক্ষণ করতে হবে কেননা রেজিস্ট্রির পর মূল দলিল ফেরত নেওয়ার সময় এই রশিদ রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দিতে হয়।

দলিল রেজিস্ট্রিঃ- রেজিস্ট্রি অফিসে ‘রেজিস্ট্রির জন্য দলিল গ্রহণ’ ও ‘দলিল রেজিস্ট্রি’ একই বিষয় নয়। রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে যে দলিলটি গৃহিত হলো তা রেজিস্ট্রি করতে অফিসভেদে দুই-তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। রেজিস্ট্রির জন্য গৃহিত দলিলে প্রথমে দলিল দাখিলকারী, সম্পাদনকারী, সনাক্তকারী, দলিল দাখিলের সময়-তারিখ, পরিশোধকৃত ফি, কর ও শুল্ক ইত্যাদি বিষয়ে পৃষ্টাঙ্কন ও সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষরের পর দলিলটি বালাম (ভলিউম) বহিতে ধারাবাহিকভাবে নকল করা হয়। এরপর মূল দলিলের শেষ পৃষ্টার উলটো পার্শ্বে ‘দলিলটি কত সালের, কত নম্বর বালাম বহির, কত পৃষ্টা থেকে কত পৃষ্টায় নকল করা হয়েছে’ তা লিখে সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করা হয়। দলিলটি বালাম বহিতে নকলকরা এবং সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করার নাম দলিল রেজিস্ট্রি। দলিলটির রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হলে দলিলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ (দাতা/বিক্রেতা-গ্রহিতার নাম, মৌজার নাম, দাগ নম্বর ইত্যাদি) নিয়ে ‘সূচিবহি’ তৈরি করা হয়, যাতে দলিলটি ভবিষ্যতে সহজেই খুজে পাওয়া যায়।

মূল দলিল ফেরত প্রদানঃ- দলিলের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হলে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল দাখিলের সময় প্রদানকৃত ‘৫২ ধারার রশিদ’ জমা দিয়ে দাখিলকারী বা তার মনোনীত ব্যক্তি মূল দলিল গ্রহন করতে পারেন। দলিল ফেরত গ্রহনের নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে মুল দলিল ফেরত না নিলে পরবর্তী প্রতি মাস বা তার অংশ বিশেষের জন্য ৫ টাকা হারে জরিমানা আদায় করা হয়। তবে বিলম্ব যত মাসই হোক না কেন, জরিমানা ১০০ টাকা এর বেশী আদায়ের বিধান নাই।

রেজিস্ট্রি শেষ হওয়ার পর কোন দলিল দাবীবিহীন অবস্থায় ২ (দুই) বছরের বেশি রেজিস্ট্রি অফিসে পরে থাকলে “রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮” এর ৮৫ ধারার বিধান মতে, রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের পূর্ব অনুমোদনক্রমে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা যায়। সুতরাং সময়মত মূল দলিল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ প্রয়োজন।

 

জমি-জমা ও দলিল রেজিস্ট্রি বিষয়ক তথ্য ও পরামর্শ পেতে এখানে ক্লিক করুন- AmarVumi.com

 

00

সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী পিএএ

11 comments

    • একটি দলিলের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম (বালামে কপি, সূচিকরণ ইত্যাদি) শেষ হলে রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৬০ ধারা অনুসারে দলিলের শেষ পৃষ্ঠায় ‘দলিলটি কত সালের, কত নম্বর বালাম বহির, কত পৃষ্ঠা থেকে কত পৃষ্ঠায় কপি করা হয়েছে’ এ সংক্রান্ত একটি পৃষ্ঠাঙ্কন লিখে সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করাকে রেজিস্ট্রেশন সারর্টিফিকেট বলে।

  • 2002 সালের সি এস খতিয়ান থেকে রেজিষ্ট্রি ঠিক আছে কিনা
    একজনে (দলিল গ্রহিতা ) দলিল সম্পাদনের পর অন্য জন (মালিক হওয়ার জন্য) নাম অর্ন্তভুক্ত করলে এবং তা না জানা সত্বে নকল বা মূল দলিল বের হয়ে গেলে দলিল সহি হবে কিনা (যদিও তিন থেকে চার যায়গায় লেখা আছে একজন গ্রহিতা আটজন দাতা)

  • এখানে দলিল সম্পাদনকারী, দাখিলকারী দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে? দয়া করা ব্যাখ্যা করবেন

    • দলিলটিতে যিনি প্রতি পৃষ্ঠায় আরাআড়িভাবে তাঁর নাম স্বাক্ষর করেন, তিনি সম্পাদনকারী। উদাহারণ- দলিলের দাতা বা বিক্রেতা ইত্যাদি। আর দলিলটি যিনি রেজিস্ট্রি অফিসে সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করেন তিনি দাখিলকারী। তিনি দাতা বা গ্রহীতা, বিক্রেতা বা ক্রেতা, তাঁদের প্রতিনিধি, তাঁদের অ্যাটর্নি হতে পারেন।

  • একটি দলিলে দলিল লেখক ছারা দাতা নিজে দলিল মুসাবিদা করতে পারবে কি না। করতে পারলে সেই আইন সম্পর্কে জানা দরকার। একটু জানালে উপকৃত হব।

  • স্যার আপনার এ পেজটা খুবই কার্যকরী ও উপকারী একটা পেজ। এমন সুন্দর কাজের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    আমার একটি প্রশ্ন আছে, অনুগ্রহ করে উত্তর দিলে উপকৃত হইব।

    আমার নিজের সাব কাবলা ক্রয় করাএকটি জমি বিক্রি করব। আমার নামে নামজারী করেছি, যার কাছ থেকে কিনেছিলাম তারও নামজারী ছিলো। এখন আমার ক্রয়কৃত মূলদদলিল, ১ম বায়া দলিল ও ২য় বায়া দলিল আছে। এখন রেজিষ্ট্রি দিতে আরো আগের বায়া দলিল প্রয়োজন হবে কিনা?

  • অনেক মানুষের অবদানে বর্তমান সভ্যতার অগ্রগতি। আপনার এ প্রচেষ্টা মানব সভ্যতার মাইলফলক।

    আপনার ক্যালকুলেটর সম্পর্কে একটি বিষয় জিজ্ঞেস্য আছে।

    ডেভেলপার থেকে অংশ অনুপাতে প্রাপ্ত ফ্ল্যাট ভুমি মালিক বিক্রি করলে আয়কর আইনের ১২৬ ধারা ও ভ্যাট কি প্রযোজ্য হবে ?

  • ডেভেলপার কর্তৃক তৈরি ভবনে ভুমি মালিকের অংশ বিক্রিতে কি আয়কর আইনের ১২৬ ধারা ও ভ্যাট প্রযোজ্য হবে?

error: Content is protected !!