ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩

ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩

Last Updated on 24/05/2024 by সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী বিপিএএ

 

ঢাকা, ৩ আশ্বিন, ১৪৩০ / ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সংসদ কর্তৃক গৃহীত নিম্নলিখিত আইনটি ৩ আশ্বিন, ১৪৩০ মোতাবেক ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে রাষ্ট্রপতির সম্মতিলাভ করিয়াছে এবং এতদ্বারা এই আইনটি সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা যাইতেছে: —

২০২৩ সনের ৩৭ নং আইন

Land Reforms Ordinance, 1984 রহিতক্রমে সময়োপযোগী করিয়া নূতনভাবে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন

যেহেতু সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন) দ্বারা ১৯৮২ সনের ২৪ মার্চ হইতে ১৯৮৬ সনের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক আইন দ্বারা জারীকৃত অধ্যাদেশসমূহের অনুমোদন ও সমর্থন সংক্রান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ১৯ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হয় এবং সিভিল আপিল নং-৪৮/২০১১ তে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক উহার বৈধতা প্রদানকারী সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৮৬ ( ১৯৮৬ সনের ১ নং আইন) বাতিল ঘোষিত হওয়ায় উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা হারাইয়াছে; এবং

যেহেতু ২০১৩ সনের ৭ নং আইন দ্বারা উক্ত অধ্যাদেশ সমূহের মধ্যে কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখা হয়; এবং

যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যলোচনা করিয়া আবশ্যক বিবেচিত অধ্যাদেশসমূহ সকল স্টেক-হোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণ করিয়া প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে বাংলায় নূতনভাবে আইন প্রণয়ন করিবার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে; এবং

যেহেতু সরকারের উল্লিখিত সিদ্ধান্তের আলোকে Land Reforms Ordinance, 1984 (Ordinance No. X of 1984 ) রহিতক্রমে সময়োপযোগী করিয়া নূতন আইন প্রণয়ন সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-

প্রথম অধ্যায়

প্রারম্ভিক

 

১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন। (১) এই আইন ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩ নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

 

২। সংজ্ঞা।বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে

(১) ‘আপিল কর্তৃপক্ষ’ অর্থ এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষ;

(২) ‘উৎপন্ন ফসল’ অর্থ ভূমিতে উৎপন্ন সকল ধরনের ফসল, খড়, শস্যের বীজ ও অন্য যে কোনো শস্য বিশেষের অবশিষ্টাংশ যাহার অর্থনৈতিক মূল্য রহিয়াছে;

(৩) ‘কালেক্টর’ অর্থ State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 2 এর clause (3) এ সংজ্ঞায়িত Collector,

(৪) ‘খাস ভূমি’ অর্থ State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 2 এর clause (15) এ সংজ্ঞায়িত khas land, এবং কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা অন্যান্য সরকারি বিভাগের মালিকানা বহির্ভূত ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাস ভূমি এবং নিম্নলিখিত প্রকারের ভূমিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে, যথা:—

(ক)  কালেক্টরের ১ নং খতিয়ান বা ৮ নং রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত সকল ভূমি;

(খ) নদী বা সমুদ্রগর্ভ হইতে জাগিয়া উঠা চরের ভূমি যাহা সিকস্তি ভূমির পয়স্তি হউক অথবা নূতন চর হউক;

(গ) Bangladesh Land Holding (Limitation) Order, 1972 (President’s Order No. 98 of 1972 ) এর section 3 অনুযায়ী পরিবার বা সংস্থার মালিকানাধীন ১ (এক) শত বিঘার অতিরিক্ত সরকারের নিকট সমর্পিত বা সমৰ্পণযোগ্য ভূমি:

(ঘ) সরকার কর্তৃক নিলামে ক্রয়কৃত ভূমি;

(ঙ) State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 92 অনুযায়ী মালিকানা ও দাবিদারবিহীন ভূমি;

(চ) সরকারি বিভাগ বা বিধিবদ্ধ সংস্থার জন্য অধিগ্রহণকৃত ভূমির মধ্যে যে পরিমাণ ভূমি অব্যবহার্য থাকিবার কারণে সরকার পুনগ্রহণ করিয়াছে; এবং

(ছ) ধারা ৪ অনুযায়ী সরকারের নিকট সমর্পিত বা সমর্পণযোগ্য ভূমি;

(৫) ‘নির্ধারিত’ অর্থ বিধি দ্বারা নির্ধারিত;

(৬) ‘নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ’ অর্থ এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ।

(৭) ‘পরিবার’ অর্থ কোনো ব্যক্তি এবং তাহার স্ত্রী, পুত্র, অবিবাহিতা কন্যা, পুত্রবধূ, পৌত্র ও অবিবাহিতা পৌত্রী:

তবে শর্ত থাকে যে, পিতা-মাতা হইতে স্বাধীনভাবে পৃথক অন্নে বসবাস করিয়া আসিতেছেন এবং তাহার নিজ নামে ইউনিয়ন অভিকর (Holding Tax) প্রদান করে এইরূপ সাবালক বা বিবাহিত পুত্র এবং তাহার স্ত্রী, পুত্র ও অবিবাহিতা কন্যা একটি পৃথক পরিবার বলিয়া গণ্য হইবে;

(৮) ‘পল্লি এলাকা’ অর্থ সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সরকার ঘোষিত শিল্পাঞ্চল বা বিশেষ অঞ্চল অথবা সরকার কর্তৃক ঘোষিত বিশেষ কোনো সংস্থার নির্ধারিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত নহে এইরূপ সকল এলাকা;

(৯) ‘প্রমিত বিঘা’ অর্থ ৩৩ (তেত্রিশ) শতকে বিঘা;

(১০) ‘ফৌজদারি কার্যবিধি’ অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898);

(১১) ‘বর্গাদার’ অর্থ এইরূপ কোনো ব্যক্তি যিনি আধি, বর্গা বা ভাগ চাষি হিসাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে অন্য কোনো ব্যক্তির ভূমি চাষ করেন এই শর্তে যে, তিনি উক্ত ভূমির উৎপন্ন ফসলের একটি অংশ উক্ত ব্যক্তিকে অর্পণ করিবেন;

(১২) ‘বর্গাচুক্তি’ অর্থ এইরূপ চুক্তি যাহার অধীন কোনো ব্যক্তি বর্গাদার হিসাবে কোনো ভূমি চাষ করেন;

(১৩) ‘বর্গাভূমি’ অর্থ বর্গাদার হিসাবে কোনো ব্যক্তির চাষাধীন কোনো ভূমি:

(১৪) ‘বাস্তুভিটা’ অর্থ State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 2 এর clause (14) এ সংজ্ঞায়িত homestead;

(১৫) ‘ব্যক্তিগত চাষ’ অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক—

(ক) নিজের শ্রম দ্বারা, বা

(খ) তাহার পরিবারের কোনো সদস্যের শ্রম দ্বারা, বা

(গ) নিজের বা তাহার পরিবারের কোনো সদস্যের শ্রম বা মজুরিতে নিযুক্ত শ্রমিকের শ্রম দ্বারা নিজের ভূমি বা বর্গাভূমি চাষ;

(১৬) ‘বিধি’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;

(১৭) ‘ভূমি’ অর্থ State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 2 এর clause (16) এ সংজ্ঞায়িত land

(১৮) “ভূমি সংস্কার বোর্ড” অর্থ ভূমি সংস্কার বোর্ড আইন ১৯৮৯ (১৯৮৯ সনের ২৩ নং আইন) এর ধারা ২ এ সংজ্ঞায়িত ভূমি সংস্কার বোর্ড:

(১৯) ‘ভূমি অফিস’ অর্থ কালেক্টর এবং কালেক্টরের অধীন অফিসসমূহ যাহা ভূমি সংক্রান্ত সার্বিক কার্য পরিচালনা করিয়া থাকে;

(২০) ‘ভূমির স্বত্বাধিকারী’ অর্থ এইরূপ কোনো ব্যক্তি যাহার নিকট হইতে বর্গাদার বর্গাচুক্তির অধীন চাষের জন্য ভূমি লাভ করিয়াছেন;

(২১) ‘মালিক’ অর্থ কৃষি ভূমির অধিকারী কোনো ব্যক্তি, সংস্থা, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষ; এবং

(২২) ‘সংস্থা’ অর্থ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কোনো সংস্থা বা কোম্পানি, ফার্ম, সোসাইটি, অ্যাসোসিয়েশন, অর্গানাইজেশন বা অথরিটি যে নামে অভিহিত হউক।

৩। আইনের প্রাধান্য।— আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে।

 

 

দ্বিতীয় অধ্যায়

কৃষি ভূমি অর্জন সীমিতকরণ

৪। কৃষি ভূমি অর্জনের সীমাবদ্ধতা।— ( ১ ) ৬০ (ষাট) প্রমিত বিঘার অধিক কৃষি ভূমির মালিক বা তাহার পরিবার হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য কোনো উপায়ে নূতন কোনো কৃষি ভূমি অর্জন করিতে পারিবেন না।

(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বিধি দ্বারা নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী শিথিল করা যাইবে, যথা:-

(ক) কোনো সমবায় সমিতির সকল সদস্য তাহাদের ভূমির মালিকানা সমিতির অনুকূলে হস্তান্তর করিয়া নিজেরা চাষাবাদ করিলে;

(খ) চা, কফি, রাবার বা অন্য কোনো ফলের বাগানের জন্য ব্যবহৃত ভূমি

(গ) কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান উহার নিজস্ব কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ভূমি ব্যবহার করিলে;

(ঘ) কোনো কাজের জন্য জনস্বার্থে সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় বিবেচিত এইরূপ কোনো ভূমি;

(ঙ) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শতভাগ রপ্তানিমুখী কৃষিপণ্য বা কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য অথবা শতভাগ রপ্তানিমুখী বিশেষায়িত শিল্পের জন্য সরকারের অনুমোদনক্রমে ব্যবহৃত ভূমি;

(চ) কোনো সংস্থা কর্তৃক জনকল্যাণার্থে সরকারের অনুমোদনক্রমে ব্যবহৃত ভূমি;

(ছ) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শিল্প কারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে সরকারের অনুমোদনক্রমে ব্যবহৃত ভূমি; এবং

(জ) ওয়াকফ, দেবোত্তর বা ধর্মীয় ট্রাস্টের ক্ষেত্রে উহার মালিকানাধীন ভূমির সম্পূর্ণ আয় ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যয় হইলে:

তবে শর্ত থাকে যে, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যদি ভূমির আয় আংশিক ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে এবং আংশিক কোনো ব্যক্তির স্বার্থে ব্যয় হইয়া থাকে, তবে ভূমির যে অংশের আয় কেবল ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যয় হয় সেই পরিমাণ ভূমির ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এর বিধান প্রযোজ্য হইবে না।

(৩) ৬০ (ষাট) প্রমিত বিঘার কম কৃষি ভূমির মালিক বা তাহার পরিবার যে কোনো উপায়ে নূতন কৃষি ভূমি অর্জন করিতে পারিবেন, তবে উক্তরূপে অর্জিত নূতন ভূমি তাহার মালিকানায় থাকা কৃষি ভূমিসহ একত্রে ৬০ (ষাট) প্রমিত বিঘার অধিক হইবে না।

(৪) যদি কোনো ভূমির মালিক এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করিয়া ক্রয়সূত্রে কোনো নূতন কৃষি ভূমি অর্জন করেন, তাহা হইলে যে পরিমাণ ভূমি ৬০ (ষাট) প্রমিত বিঘার অতিরিক্ত হইবে তাহা সরকারের অনুকূলে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সমর্পিত হইবে এবং উক্ত সমর্পিত ভূমির মূল্য বাবদ কোনো ক্ষতিপূরণ প্রদেয় হইবে না

তবে শর্ত থাকে যে, উত্তরাধিকার, দান বা উইল এর মাধ্যমে অর্জিত ভূমির ক্ষেত্রে উক্ত বিধান প্রযোজ্য হইবে না।

(৫) উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত ভূমি ৬০ (ষাট) প্রমিত বিঘার অধিক হইলে ভূমির মালিক তাহার পছন্দ অনুযায়ী ৬০ (ষাট) বিঘা ভূমি রাখিতে পারিবে এবং অবশিষ্ট ভূমি সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ প্রদানপূর্বক খাস করিতে পারিবে।

 

তৃতীয় অধ্যায়

স্থাবর সম্পত্তির বেনামি লেনদেন

৫। স্থাবর সম্পত্তির বেনামি লেনদেন। (১) কোনো ব্যক্তি নিজের উপকারার্থে কোনো স্থাবর সম্পত্তির বেনামি লেনদেন করিতে পারিবেন না।

ব্যাখ্যা। — এই ধারায় ‘বেনামি লেনদেন’ বলিতে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক নিজের উপকারার্থে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে কোনো স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়কে বুঝাইবে।

(২) কোনো স্থাবর সম্পত্তির মালিক রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর বা দান করিলে, ইহা অনুমান করিতে হইবে যে, মালিক হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে উক্ত সম্পত্তিতে নিহিত তাহার উপকারদায়ক স্বার্থ হস্তান্তর বা দান করিয়াছেন এবং হস্তান্তর গ্রহীতা তাহার নিজের উপকারার্থে উক্ত সম্পত্তি ধারণ করিয়াছেন এবং মালিক উক্ত সম্পত্তিতে তাহার উপকারদায়ক স্বার্থ হস্তান্তর করিবার অভিপ্রায় করেন নাই অথবা হস্তান্তর গ্রহীতা মালিকের উপকারার্থে উক্ত সম্পত্তি ধারণ করিয়াছেন, ইহা প্রমাণ করিবার জন্য মৌখিক বা দালিলিক কোনো সাক্ষ্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের সম্মুখে কোনো কার্যধারায় গ্রহণযোগ্য হইবে না।

(৩) কোনো স্থাবর সম্পত্তির রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করা হইলে, ইহা অনুমান করিতে হইবে যে, উক্ত ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তি তাহার নিজ উপকারার্থে অর্জন করিয়াছেন এবং উক্তরূপ হস্তান্তরের পণ অন্য কোনো ব্যক্তি পরিশোধ বা প্রদান করিলে ইহা অনুমান করিতে হইবে যে, উক্ত অন্য ব্যক্তি হস্তান্তর গ্রহীতার উপকারার্থে উক্ত পণ পরিশোধ বা প্রদান করিবার অভিপ্রায় করিয়াছেন এবং হস্তান্তর গ্রহীতা অন্য কোনো ব্যক্তির উপকারার্থে বা পণ পরিশোধকারী বা প্রদানকারীর উপকারার্থে উক্ত সম্পত্তি ধারণ করিয়াছেন, ইহা প্রমাণ করিবার জন্য মৌখিক বা দালিলিক কোনো সাক্ষ্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের সম্মুখে কোনো কার্যধারায় গ্রহণযোগ্য হইবে না।

 

চতুর্থ অধ্যায়

বাস্তুভিটা

৬। বাস্তুভিটা হইতে উচ্ছেদ, ইত্যাদি না করা।– কোনো ভূমির স্বত্বাধিকারীকে কোনো কর্মকর্তা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উপযুক্ত আদালতের আদেশ ব্যতিরেকে বাস্তুভিটা হিসাবে তৎকর্তৃক ব্যবহৃত কোনো ভূমি হইতে উচ্ছেদ করা যাইবে না।  তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার কোনো কিছু অন্য কোনো আইনের অধীন কোনো বাস্তুভিটা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।

 

৭। বাস্তুভিটার জন্য খাস ভূমির বন্দোবস্ত। (১) পল্লি এলাকায় বাস্তুভিটা হিসাবে ব্যবহৃত উপযুক্ত কোনো খাস ভূমি পাওয়া গেলে সরকার উক্ত ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানের সময় ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা বা তাহার পরিবার, ভূমিহীন কৃষক ও শ্রমিকদের অগ্রাধিকার প্রদান করিবে; তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তিকে ৫ (পাঁচ) শতাংশের অধিক উত্তরূপ কোনো ভূমি বরাদ্দ প্রদান করা যাইবে না।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন বরাদ্দকৃত কোনো ভূমি কোনো ব্যক্তি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য হইবেন কিন্তু উহা হস্তান্তরযোগ্য হইবে না।

 

পঞ্চম অধ্যায়

বর্গাদার

৮। বর্গাচুক্তির অধীন চাষ (১) এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে চুক্তি সম্পাদন না করিয়া, কোনো ব্যক্তি তাহার ভূমি চাষ করিবার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে অনুমতি প্রদান করিবেন না এবং কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ভূমি তাহাদের মধ্যে উক্ত ভূমির উৎপন্ন ফসল ভাগ করিয়া নেওয়ার শর্তে চাষ করিতে পারিবেন না।

(২) কোনো বর্গাচুক্তি উহা সম্পাদনের তারিখ হইতে কমপক্ষে ১ (এক) বৎসরের জন্য কার্যকর থাকিবে।

 

৯। বিদ্যমান বর্গাদারের স্বীকৃতি। (১) এই আইন কার্যকর হইবার অব্যবহিত পূর্বে অন্য কোনো ব্যক্তির ভূমির বর্গাদার হিসাবে চাষকারী কোনো ব্যক্তি এই আইন অনুযায়ী উক্ত ভূমি সংক্রান্ত বর্গাদার বলিয়া গণ্য হইবেন।

(২) এই আইন কার্যকর হইবার তারিখ হইতে ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো ভূমির স্বত্বাধিকারী এবং বর্গাদার ধারা ৮ এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে একটি চুক্তি সম্পাদন করিবেন।

(৩) পক্ষগণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করিতে ব্যর্থ হইলে তাহাদের মধ্যে যে কোনো একজন চুক্তি সম্পাদন করাইবার জন্য সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে আবেদন করিতে পারিবেন।

(৪) সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানপূর্বক ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করিবেন।

(৫) যদি নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, আবেদনকারী আবেদনে উল্লিখিত কোনো সম্পত্তি সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন করাইবার অধিকারী, তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ বিরোধীপক্ষকে নির্দেশ প্রদানের তারিখ হইতে ২ (দুই) সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিবেন এবং যদি উক্ত পক্ষ চুক্তি সম্পাদন করিতে ব্যর্থ হন তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ উক্ত পক্ষের হইয়া ইহা সম্পাদন করিবেন।

(৬) এই ধারার অধীনে সম্পাদিত বর্গাচুক্তি এই আইন কার্যকর হইবার তারিখ হইতে কার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত তারিখ হইতে ৫ (পাঁচ) বৎসর মেয়াদের জন্য বৈধ থাকিবে।

 

১০। বর্গাদারের মৃত্যুর পর বর্গাভূমির চাষ। (১) কোনো বর্গাদার বর্গাচুক্তির মেয়াদ শেষ হইবার পূর্বে মারা গেলে, উহার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অথবা এই আইনের অধীন বর্গাচুক্তির অবসান না হওয়া পর্যন্ত মৃত বর্গাদারের পরিবারের জীবিত সদস্য উক্ত বর্গাভূমির চাষ অব্যাহত রাখিতে পারিবেন।

(২) কোনো বর্গাদার বর্গাভূমি চাষ করিবার মতো তাহার পরিবারের কোনো জীবিত সদস্যকে না। রাখিয়া মারা গেলে, ভূমির স্বত্বাধিকারী উক্ত ভূমি ব্যক্তিগত চাষের অধীন আনিতে অথবা অন্য কোনো বর্গাদার কর্তৃক উক্ত ভূমি চাষের অনুমতি প্রদান করিতে পারিবেন।

 

১১। বর্গাচুক্তির অবসান । – (১) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিম্নলিখিত কারণে প্রদত্ত আদেশ কার্যে পরিণতকরণের ক্ষেত্র ব্যতীত কোনো ভূমির স্বত্বাধিকারী বর্গাচুক্তি অবসান করিতে পারিবেন না, যথা:-

(ক) বর্গাদার কোনো যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে বর্গাভূমি চাষ করিতে ব্যর্থ হইলে;

(খ) বর্গাদার কোনো যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থিত উক্ত বর্গাভূমির অনুরূপ কোনো ভূমিতে গড়ে যে পরিমাণ শস্য উৎপন্ন হয় সেই পরিমাণ শস্য উৎপন্ন করিতে ব্যর্থ হইলে;

(গ) বর্গাদার বর্গা ভূমি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কৃষি ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করিলে;

(ঘ) বর্গাদার এই আইনের কোনো বিধান অথবা তদধীন প্রণীত বিধি বা আদেশ লঙ্ঘন করিলে;

(ঙ) বর্গাদার তাহার চাষের অধিকার সমর্পণ বা স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করিলে;

(চ) বর্গাদার ব্যক্তিগত চাষ না করিলে; এবং

(ছ) ভূমির স্বত্বাধিকারীর বর্গাভূমি ব্যক্তিগত চাষের জন্য আবশ্যক হইলে।

(২) কোনো ভূমির স্বত্বাধিকারী যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে উপ-ধারা (১) এর দফা (ছ) এর অধীন কোনো বর্গাচুক্তির অবসানকল্পে কোনো ভূমি ব্যক্তিগত চাষের অধীন আনিতে ব্যর্থ হইলে বা অনুরূপ অবসানের তারিখের ২৪ (চব্বিশ) মাসের মধ্যে অন্য কোনো বর্গাদারকে উক্ত ভূমি চাষের অনুমতি প্রদান না করিলে, নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদকৃত বর্গাদার কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত বর্গাদারের নিকট উক্ত ভূমির দখল পুনরুদ্ধার করিয়া দিতে পারিবেন এবং উক্ত বর্গাদার উহার ভিত্তিতে এই আইনের অধীন বর্গাচুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া বা বর্গাচুক্তির অবসান হওয়া পর্যন্ত উক্ত ভূমির চাষ অব্যাহত রাখিতে পারিবেন।

 

১২। বর্গাভূমির উৎপন্ন ফসলের বিভাজন।— ( ১ ) কোনো বর্গাভূমির উৎপন্ন ফসল নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করিতে হইবে, যথা:—

(ক) ভূমির স্বত্বাধিকারী ভূমির জন্য এক তৃতীয়াংশ গ্রহণ করিবেন;

(খ) বর্গাদার শ্রমের জন্য এক তৃতীয়াংশ গ্রহণ করিবেন; এবং

(গ) ভূমির স্বত্বাধিকারী বা বর্গাদার বা উভয়ে তাহাদের বহনকৃত শ্রমের ব্যয় ব্যতীত, চাষের ব্যয়ের সমানুপাতে এক তৃতীয়াংশ গ্রহণ করিবেন।

(২) কোনো বর্গাভূমির কাটা শস্য বর্গাদার বা ভূমির স্বত্বাধিকারীর মালিকানাধীন কোনো স্থানে, যাহা উক্ত বর্গাভূমির নিকটতম, অথবা পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সম্মত অন্য কোনো স্থানে মাড়াই ও বিভাজনের জন্য গোলাজাত করিতে হইবে।

(৩) বর্গাদার শস্য কাটিবার অব্যবহিত পরে উৎপন্ন ফসলের প্রাপ্য অংশ ভূমির স্বত্বাধিকারীকে প্রদান করিবেন এবং ভূমির স্বত্বাধিকারী উক্ত অংশ গ্রহণ করিলে প্রত্যক পক্ষ উৎপন্ন ফসল হইতে তাহার গৃহীত পরিমাণের একটি রসিদ বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে অন্য পক্ষকে প্রদান করিবেন।

(৪) বর্গাদার কর্তৃক প্রদত্ত উৎপন্ন ফসলের অংশ ভূমির স্বত্বাধিকারী গ্রহণ করিতে অথবা উহার জন্য রসিদ প্রদান করিতে অস্বীকার করিলে বর্গাদার উহা লিখিতভাবে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করিবেন।

(৫) উপ-ধারা (৪) এর অধীন অবহিত হইবার পর নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ ভূমির স্বত্বাধিকারীর উপর বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে ও পদ্ধতিতে নোটিশ জারির তারিখ হইতে ৭ (সাত) দিনের মধ্যে উৎপন্ন ফসলের অংশ গ্রহণ করিবার আহ্বান জানাইয়া নোটিশ জারি করিবে।

(৬) ভূমির স্বত্বাধিকারী নোটিশ জারির তারিখ হইতে ৭ (সাত) দিনের মধ্যে উৎপন্ন ফসলের অংশগ্রহণ করিতে ব্যর্থ হইলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বর্গাদারকে উক্ত উৎপন্ন ফসল যে কোনো সরকারি ক্রয় এজেন্সির নিকট অথবা অনুরূপ এজেন্সির অনুপস্থিতিতে স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করিবার অনুমতি প্রদান করিবেন।

(৭) কোনো বর্গাদার উৎপন্ন ফসল বিক্রয় করিলে তিনি বিক্রয়ের তারিখ হইতে ৭ (সাত) দিনের মধ্যে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট উক্ত বিক্রয়লব্ধ অর্থ জমা প্রদান করিবেন।

(৮) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উহার নিকট উপ-ধারা (৭) এর অধীন জমাকৃত অর্থের পরিমাণ এবং বর্গাদার কর্তৃক বিক্রিত উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ বিবৃত করিয়া বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে একটি রসিদ বর্গাদারকে প্রদান করিবেন এবং উক্ত রসিদ ভূমির স্বত্বাধিকারীর নিকট উৎপন্ন ফসলের অংশ অর্পণের বাধ্যবাধকতা হইতে বর্গাদারকে মুক্ত করিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, উৎপন্ন ফসলের কোনো পরিমাণ ভূমির স্বত্বাধিকারীর পাওনা থাকিলে উক্ত পরিমাণ ফসল অর্পণের ক্ষেত্রে বর্গাদারের বাধ্যবাধকতা অব্যাহত থাকিবে।

(৯) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (৭) এর অধীন জমাকৃত অর্থের বিষয়ে ভূমির স্বত্বাধিকারীকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে ও পদ্ধতিতে অবহিত করিবে।

(১০) ভূমির স্বত্বাধিকারী উপ-ধারা (৯) এর অধীন জমা সম্পর্কে অবহিত হইবার তারিখ হইতে ১ (এক) মাসের মধ্যে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে উক্ত জমাকৃত অর্থ গ্রহণ না করিলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উক্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা খাতে ভূমির স্বত্বাধিকারীর অনুকূলে জমা করিতে পারিবে এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে ও পদ্ধতিতে উক্ত জমা সম্পর্কে ভূমির স্বত্বাধিকারীকে অবহিত করিবে।

 

১৩। বর্গাদারের ক্রয়াধিকার।— কোনো ভূমির স্বত্বাধিকারী বর্গাভূমি বিক্রয় করিবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলে তিনি বর্গাদারকে লিখিতভাবে এই মর্মে প্রস্তাব করিবেন যে, তিনি উক্ত বর্গাভূমি ক্রয় করিতে ইচ্ছুক আছেন কিনা: তবে শর্ত থাকে যে, ভূমির স্বত্বাধিকারী উক্ত বর্গাভূমি কোনো সহ-শরিক অথবা তাহার পিতা- মাতা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পৌত্র বা তাহার পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের নিকট বিক্রয় করিলে, উক্ত বিধান প্রযোজ্য হইবে না।

(২) বর্গাদার উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রস্তাব পাইবার তারিখ হইতে ১৫ (পনেরো) দিনের মধ্যে উক্ত বর্গাভূমি ক্রয়ের বিষয়ে স্বীয় সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে ভূমির স্বত্বাধিকারীকে অবহিত করিবেন।

(৩) বর্গাদার উক্ত বর্গাভূমি ক্রয় করিতে সম্মত হইলে তিনি ভূমিটির দাম সম্পর্কে ভূমির স্বত্বাধিকারীর সহিত আলাপ-আলোচনা করিবেন এবং তাহাদের মধ্যে যথাসম্মত শর্তাবলিতে উক্ত বর্গাভূমি ক্রয় করিবেন।

(৪) ভূমির স্বত্বাধিকারী উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত সময়ের মধ্যে বর্গাদারের নিকট হইতে উক্ত বর্গাভূমি ক্রয়ের বিষয়ে তাহার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনো কিছু অবগত না হইলে অথবা বর্গাদার উক্ত ভূমি ক্রয় না করিবার বিষয়ে তাহার সিদ্ধান্ত ভূমির স্বত্বাধিকারীকে অবহিত করিলে অথবা বর্গাদার ভূমির স্বত্বাধিকারীর দাবিকৃত মূল্য প্রদান করিতে সম্মত না হইলে, ভূমির স্বত্বাধিকারী যাহাকে উপযুক্ত মনে করিবেন সেইরূপ ব্যক্তির নিকট উক্ত ভূমি বিক্রয় করিতে পারিবেন : তবে শর্ত থাকে যে, ভূমির স্বত্বাধিকারী উক্ত ভূমি বর্গাদার কর্তৃক প্রস্তাবিত দাম হইতে কম দামে বিক্রয় করিতে পারিবেন না।

(৫) বর্গাদার ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বর্গাভূমি ক্রয় করিলে, উক্ত ভূমি সংক্রান্ত বর্গাচুক্তি ক্রেতার উপর এইরূপে বাধ্যতামূলক হইবে যেন ক্রেতাই উক্ত চুক্তির একটি পক্ষ ছিলেন।

 

১৪। বর্গাভূমির ঊর্ধ্বসীমা।— কোনো বর্গাদার প্রমিত ১৫ (পনেরো) বিঘার অধিক ভূমি চাষ করিবার অধিকারী হইবেন না।

 

১৫। চাষকার্যে বাধা-নিষেধ ।— ( ১ ) কোনো বর্গাচুক্তির অধীন অথবা চাকরি বা শ্রমিক হিসাবে ব্যতীত কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ভূমি চাষ করিবেন না।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করিয়া অন্য কোনো ব্যক্তির ভূমির চাষ করেন, তাহা হইলে সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত ভূমির উৎপন্ন ফসল বাধ্যতামূলকভাবে সংগ্রহ করিতে পারিবে।

 

১৬। বিরোধ নিষ্পত্তি। (১) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বর্গাদার ও ভূমির স্বত্বাধিকারীর মধ্যকার নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ হইতে উদ্ভূত প্রত্যেক বিরোধের মীমাংসা করিবে, যথা :-

(ক) উৎপন্ন ফসলের বিভাজন বা অর্পণ;

(খ) বর্গাচুক্তির অবসান; এবং

(গ) উৎপন্ন ফসলের গোলাজাত ও মাড়াইয়ের স্থান নির্ধারণ।

(২) যদি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো বিরোধ মীমাংসায় এইরূপ কোনো প্রশ্ন উদ্ভূত হয় যে, কোনো ব্যক্তি বর্গাদার কিনা অথবা উৎপন্ন ফসলের অংশ কাহার নিকট অর্পর্ণীয়, তাহা হইলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রশ্নের নিষ্পত্তি করিবে।

(৩) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো বর্গাদার বা ভূমির স্বত্বাধিকারী উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো বিরোধ মীমাংসার জন্য উক্ত বিরোধ উদ্ভূত হইবার তারিখ হইতে ৩ (তিন) মাসের মধ্যে বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে লিখিতভাবে আবেদন না করিলে, উক্ত কর্তৃপক্ষ উক্ত বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করিবে না।

(৪) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে শুনানির সুযোগ প্রদান, সাক্ষ্য উপস্থাপন এবং প্রয়োজনীয় তদন্তের পর আবেদন গ্রহণের তারিখ হইতে ৩ (তিন) মাসের মধ্যে তাহার সিদ্ধান্ত প্রদান করিবে।

(৫) বিরোধ মীমাংসার পদ্ধতি, ফি ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

 

১৭। আপিল।— (১) এই আইনের অধীন নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত বা গৃহীত যে কোনো আদেশ, সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ উক্ত আদেশ, সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থা অবহিত হইবার তারিখ হইতে ৩০ (ত্রিশ) দিনের আপিল কর্তৃপক্ষের নিকট বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি, ফরম ও ফি প্রদান সাপেক্ষে আপিল করিতে পারিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কৃত আপিল বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে আপিল কর্তৃপক্ষ নিষ্পত্তি করিবে।

(৩) আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে এবং ইহার বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।

 

ষষ্ঠ অধ্যায়

বিবিধ

১৮। ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং তথ্য ভাণ্ডার সংরক্ষণ। ভূমি সংস্কার বোর্ড দেশের সকল ভূমি অফিসে সকল তথ্যের ডিজিটাল তথ্য ভাণ্ডারসহ আধুনিক ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থা চালু করিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।

 

১৯। দণ্ড।— কোনো ব্যক্তি এই আইনের কোনো বিধান অথবা এই আইনের অধীন কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত কোনো আদেশ লঙ্ঘন করিলে, উহা এই আইনের অধীন একটি অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

 

২০। অপরাধের বিচার।— এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ বিচারের ক্ষেত্রে আদালত ফৌজদারি কার্যবিধি এর Chapter XXII তে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি, যতদূর প্রযোজ্য হয়, অনুসরণ করিবে।

 

২১। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা।— সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

 

২২। রহিতকরণ ও হেফাজত। ( 1 ) Land Reforms Ordinance, 1984 (Ordinance No. X of 1984) অতঃপর উক্ত Ordinance বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্বারা রহিত করা হইল।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও, উক্ত Ordinance এর অধীন—

(ক) কৃত কোনো কার্য, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা চলমান কোনো কার্য এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত বা চলমান বলিয়া গণ্য হইবে;

(খ) প্রণীত কোনো বিধি, প্রবিধান, জারীকৃত কোনো প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত কোনো আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশ এই আইনের সহিত সামজস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন প্রণীত, জারীকৃত বা প্রদত্ত বলিয়া গণ্য হইবে; এবং

(গ) দায়েরকৃত কোনো মামলা বা সূচিত কোনো কার্যধারা অনিষ্পন্ন থাকিলে উহা এইরূপে নিষ্পন্ন করিতে হইবে, যেন উহা এই আইনের অধীন দায়েরকৃত বা সূচিত হইয়াছে।

 

২৩। ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ। (১) এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।

(২) বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।

 

তথ্যসূত্রঃ ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩

 

সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী বিপিএএ

Add comment

error: Content is protected !!