জমির মালিকানা যাচাই এবং জমির খতিয়ান পর্চা বের করার নিয়ম পদ্ধতি

জমির মালিকানা যাচাই এবং জমির খতিয়ান / পর্চা বের করার নিয়ম পদ্ধতি

Last Updated on 12/05/2023 by সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী বিপিএএ

বাংলাদেশ ঘনবসতি পর্ণ  একটি দেশ, এ দেশে জনগণের তুলনায় জমির পরিমান অনেক কম। এই জন্য দিন দিন জমির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য দলিল এর মধ্যে বিভিন্ন সমসার  হছে।  এই জন্য বাংলাদেশ সরকার জমির মালিক, জমির খতিয়ান /পর্চা  বের করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যার ফলে আমরা ঘরে বসে জমির মালিক, জমির খতিয়ান /পর্চা  বের করতে পারবো।

জমির খতিয়ান বা পর্চা কি?

জমির খতিয়ান বা পর্চা একই জিনিস। জমির ক্ষেত্রে খতিয়ান অর্থ হইল ‘হিসাব। মূলত সরকারি ভাবে জমির মালিকানা প্রকাশ এর জন্য যে দলিল করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।  এলাকা ভেদে এটি ভিন্ন নাম হতে পারে।

খতিয়ানে কি কি উল্লেখ থাকে?

মালিকানা তথ্য সহ খতিয়ানে অনেক কিছু থাকে।  যেমনঃ

  • প্রজা বা জমি দখলদারের নাম, ঠিকানা, পিতার নাম ও প্রজা বা দখলদার কোন শ্রেণীভুক্ত।
  • প্রজা বা দখলদার কর্তক জমির অবস্থান, পরিমান ও সীমানা।
  • জমির মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
  • এস্টেটের মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
  • খতিয়ান তৈরি করার সময় খাজনার পরিমান ও ২৮,২৯,৩০ বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত খাজনা। গরু চরণভুমি, বনভুমি ও মৎস খামারের জন্য ধারণকৃত অর্থ।
  • খাজনার যে পদ্ধতিতে নির্ধারিত করা হয়েছে তার বিবরণ।
  • ২৬ ধারা মোতাবেক নির্ধারিত এবং ন্যায়সঙ্গত খাজনা।
  • খাজনা বৃদ্ধিক্রম থাকলে তার বিবরণ।
  • ইজারাকৃত জমির ক্ষেত্রে জমির মালিকের অধিকার ও কর্তব্য।
  • প্রজাস্বত্ব বিশেষ শর্ত ও তার পরিনতি।
  • পথ চলার অধিকার ও জমি সংলগ্ন অন্যান্য অধিকার।
  • নিজস্ব জমি হলে তার বিবরণ।
  • খতিয়ান নং, মৌজা নং, জেএল নং, দাগ নং, বাট্রা নং, এরিয়া নং ইত্যাদি উল্লেখ থাকে।

খতিয়ানের প্রকারভেদ

খতিয়ান সাধারণত চার ধরনের রয়েছে।

  • সিএস খতিয়ান। (Cadastral Survey)
  • এসএ খতিয়ান । (State Acquisition Survey)
  • আরএস খতিয়ান। (Revisional Survey)
  • বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ। (City Survey)

সিএস খতিয়ান। (Cadastral Survey

এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম যে জরিপ হয় সেটাই হচ্ছে সিএস খতিয়ান (Cadastral Survey)। এই জরিপ ১৮৮৭ সালে শুরু হয়ে ১৯৪০ সালে শেষ হয়। এই জরিপ কক্সবাজারের রামুতে শুরু হয় এবং দিনাজপুরে শেষ হয়। জরিপ চলাকালে সিলেট আসাম প্রদেশ এর সাথে সংযুক্ত এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম জমিদারি প্রথার সাথে বাঙ্গালীদের বিরোধ থাকায় এই দুটি অঞ্চল সিএস জরিপের আওতায় আনা হয় নাই।

সুতরাং সিএস জরিপ হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জরিপ এবং এর খতিয়ানকে সিএস খতিয়ান বলা হয়।

এসএ খতিয়ান । (State Acquisition Survey)

১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। আইন পাশের পর ততকালিন সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ সাবস্ত করেন। এই সময় সরকারি আমিনগণ সরেজমিন অর্থাৎ মাঠে না গিয়ে অফিসে বসে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে খতিয়ান তৈরি করেন। এটাকে এসএ খতিয়ান বলে। কোন কোন অঞ্চলে এ খতিয়ানকে টেবিল খতিয়ান বা ৬২ খতিয়ান বলা হয়। সরেজমিন না গিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয় বলে এ খতিয়ানে অনেক ধরণের অসমতা দেখা দেয়।

আরএস খতিয়ান। (Revisional Survey)

সিএস খতিয়ান সম্পন্ন হওয়ার ৫০ বছর অতিক্রম করে আরিএস জরিপ শুরু হয়। আগের খতিয়ানের ভুল সংশোধন করে এতটাই স্বচ্ছ করা হয় যে, মালিকানা, দখলদার বিরোধ কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে এটির উপর নির্ভর করতে হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই জরিপ পরিচালনা করা হয় বলে এর খতিয়ানকে বাংলাদেশ খতিয়ানও বলা হয়।

বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ। (City Survey)

বাংলাদেশে সর্বশেষ এই জরিপ ১৯৯৮-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পরিচালিত হয়। যেটির কাজ বর্তমান চলমান রয়েছে। ঢাকা অঞ্চলে ইহা মহানগর জরিপ হিসাবেও পরিচিত।

জমির মালিকানা বের করার প্রয়োজন হয় কেন?

জমি ক্রয় করার আগে  অবশ্যই মালিকানা যাচাই করে নিতে হয়। তা নাহলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভবনা থাকবে। নকল মালিক সেজে আপনার কাছে জমি বিক্রয়  করতে পারে অনেকেই।  এছাড়া জমি নিয়ে কোনো বিরোধ আছে কিনা তা দেখতে হবে।

জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম

বর্তমানে আপনি দুইভাবে জমির মালিকানা যাচাই করতে পারবেন। যেমন – এক. কোন খতিয়ান সম্পর্কে যদি আপনার সন্দেহ হয় তাহলে খতিয়ানটি নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে খতিয়ানের ভলিয়াম দেখুন। আপনার খতিয়ান ভলিয়মের সাথে মিল থাকলে খতিয়ানটি সঠিক নচেৎ জালিয়াতি করা হয়েছে। দুই. অনলাইনের মাধ্যমেও খতিয়ানটি যাচাই করে নিতে পারেন নিজে নিজেই। আপনি যদি স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেটে ইন্টারনেট সংযোগ করে অনলাইনে জমির কাগজ দেখতে পারেন।

খতিয়ান বের করার নিয়ম

খতিয়ান  আপনি দুই ভাবে বের করতে পারবেন

খতিয়ানের অনলাইন কপি এবং ডাক যোগে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন। সেটেলমেন্ট থেকে খতিয়ান উঠাতে ১০০ (একশত) টাকা খরচ হয়। আর অনলাইনে খতিয়ান উঠাতে ৫০ টাকা খরচ লাগবে।


অনলাইনে জমির খতিয়ান উঠানোর পদ্ধতি জেনে নিন

Md. Shahazahan Ali

2 comments

  • আমার দাদী আমার বাবাকে ও চাচাকে জমির দলিল দিয়াছে। অন্য চাচা নিংমং করেছে এবং পরিচিত।আমার বাবার নাম আঃ মালেক যে পরিচিত তার নাম আঃ খালেক।এই খালেক বলে এখানে মালেক না এখানে খালেক স্পষ্ট বলাও যাচ্ছেনা। আমার প্রশ্ন হলো খালেক/মালেক যাই থাকুক পরিচিত এবং নিংমংকারী জমির মালিক হতে পারবে কি?

error: Content is protected !!