ওয়াক্‌ফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) বিশেষ বিধান আইন

ওয়াক্‌ফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) বিশেষ বিধান আইন, ২০১৩

Last Updated on 09/02/2023 by সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী বিপিএএ

ওয়াক্‌ফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) বিশেষ বিধান আইন, ২০১৩

( ২০১৩ সনের ৫ নং আইন )

[ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ]

ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির হস্তান্তর ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণকল্পে বিশেষ বিধান করিবার লক্ষ্যে প্রণীত আইন

যেহেতু ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির হস্তান্তর ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণকল্পে বিশেষ বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইলঃ-

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন

  • এই আইন ওয়াক্‌ফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) বিশেষ বিধান আইন, ২০১৩ নামে অভিহিত হইবে।
  • (ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

সংজ্ঞা

বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে,

  • ‘অধ্যাদেশ’’ অর্থ ওয়াক্‌ফ অধ্যাদেশ, ১৯৬২;
  • ‘‘অধ্যাদেশের ধারা’’ অর্থ ওয়াক্‌ফ অধ্যাদেশ, ১৯৬২ এর ধারা;
  • ‘‘ডেভেলপার’’ অর্থ রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ২ (১৫) এ সংজ্ঞায়িত ডেভেলপার;
  • ‘‘দন্ডবিধি’’ অর্থ Penal Code, 1860;
  • ‘‘ধারা’’ অর্থ এই আইনের ধারা;
  • ‘‘তফসিল’’ অর্থ এই আইনের তফসিল;
  • ‘‘ফৌজদারী কার্যবিধি’’ অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898;
  • ‘‘বিশেষ কমিটি’’ বা “কমিটি” অর্থ ধারা ৮ এর অধীন গঠিত ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হস্তান্তর বিশেষ কমিটি বা কমিটি;
  • “মন্ত্রণালয়” অর্থ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়;
  • ‘‘রিয়েল এস্টেট’’ অর্থ রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ২(১২) এ সংজ্ঞায়িত রিয়েল এস্টেট; এবং
  • “সম্পত্তি” অর্থ সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর অধীন সংজ্ঞায়িত স্থাবর সম্পত্তি।

আইনের প্রাধান্য

আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইন, বিধি, প্রবিধান, ওয়াক্‌ফ দলিল বা চুক্তিপত্রে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।

হস্তান্তর পদ্ধতি

এই আইনের অধীন নিম্নরূপ পদ্ধতিতে সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাইবে, যথাঃ –

  • বিক্রয়ের মাধ্যমে;
  • দানের মাধ্যমে;
  • বন্ধকের মাধ্যমে;
  • বিনিময়ের মাধ্যমে ;
  • ইজারা প্রদানের মাধ্যমে; এবং
  • অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তরের মাধ্যমে।

উপ-ধারা (১) এর অধীন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।

সম্পত্তি হস্তান্তরে সাধারণ সীমাবদ্ধতা

 ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি কেবল সংশ্লিষ্ট ওয়াক্‌ফ কিংবা উক্ত ওয়াক্‌ফের স্বত্ত্বভোগীদের (beneficiary) প্রয়োজনে, কল্যাণে ও স্বার্থে হস্তান্তর করা যাইবে; এবং অনুরূপ হস্তান্তর ওয়াক্‌ফের উদ্দেশ্যের সহিত সংগতিপূর্ণ হইতে হইবে।

অধ্যাদেশ এর ধারা ২(৯) মতে ওয়াক্‌ফে আগন্তক (stranger) এমন কোনো ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং তাহার স্বার্থে বা প্রয়োজনে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাইবে না।

ওয়াক্‌ফ কিংবা উহার স্বত্ত্বভোগীদের (beneficiary) প্রয়োজন, কল্যাণ ও স্বার্থে অনিবার্যভাবে আবশ্যক বিবেচিত না হইলে, কোনো ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বিক্রয় বা চিরস্থায়ী ইজারামূলে হস্তান্তর করা যাইবে না।

এই আইনের অধীন হস্তান্তরের জন্য বিবেচ্য কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি, যদি ওয়াকিফ তাহার ওয়ারিশগণ, পরিবারের সদস্যগণ বা নির্ধারিত ব্যক্তিগণের উপকারার্থে করিয়া থাকেন, তাহা হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের লিখিত সম্মতি ব্যতিরেকে উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাইবে না।

হস্তান্তরলব্ধ অর্থ ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা

ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট ওয়াক্‌ফ এর যেরূপ প্রয়োজনে, কল্যাণে ও স্বার্থে হস্তান্তর করা হইবে, হস্তান্তরলব্ধ অর্থ কেবল অনুরূপ প্রয়োজনে, কল্যাণে ও স্বার্থে ব্যবহার করিতে হইবে।

মোতাওয়াল্লী বা ওয়াক্‌ফ প্রশাসক কর্তৃক হস্তান্তর

  1. অধ্যাদেশের ধারা ৩৪ এর অধীন ওয়াক্‌ফ প্রশাসক নিজ নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করিয়াছেন এইরূপ ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি ব্যতিরেকে অন্য সকল ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি কেবল সংশ্লিষ্ট মোতাওয়াল্লীর লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে, ওয়াক্‌ফের প্রয়োজন, কল্যাণ ও স্বার্থে এবং ওয়াক্‌ফের উদ্দেশ্যের সহিত সংগতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, ধারা ৪ এ বর্ণিত পদ্ধতিতে হস্তান্তর করা যাইবে।
  2. অধ্যাদেশের ধারা ৩৪ এর অধীন ওয়াক্‌ফ প্রশাসক নিজ নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করিয়াছেন এইরূপ ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি, ওয়াক্‌ফ প্রশাসকের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে, ওয়াক্‌ফের প্রয়োজন, কল্যাণ ও স্বার্থে এবং ওয়াক্‌ফের উদ্দেশ্যের সহিত সংগতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, ধারা ৪ এ বর্ণিত পদ্ধতিতে হস্তান্তর করা যাইবে।
  3. উপ-ধারা (১) ও (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, মোতাওয়াল্লী বা ওয়াক্‌ফ প্রশাসক, বিশেষ কমিটির সুপারিশ এবং সরকারের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বিক্রয়, দান বিনিময়, বন্ধক বা ০৫(পাঁচ) বছরের অধিক মেয়াদের জন্য ইজারা এবং অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তর করিতে পারিবেন না, উক্তরূপ সুপারিশ ও অনুমোদন ব্যতিরেকে হস্তান্তর করা হইলে অনুরূপ হস্তান্তর অবৈধ ও অকার্যকর হইবে।
  4. এই ধারার অধীন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হস্তান্তরের লক্ষ্যে বিশেষ কমিটির সুপারিশ যুক্তিসংগত ও প্রয়োজনীয় বিবেচনা করিলেই কেবল সরকার অনুমোদন প্রদান করিবে।
  5. এই ধারার অধীন ৫(পাঁচ) বছরের কম মেয়াদের জন্য ইজারামূলে হস্তান্তরিত সম্পত্তিতে কোনরূপ স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করা যাইবে না।

হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে বিশেষ কমিটি

এই আইনের অধীন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হস্তান্তরের বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে বিশেষ কমিটি গঠিত হইবে, যথাঃ-

  •  ওয়াক্‌ফ প্রশাসক, যিনি পদাধিকারবলে উহার সভাপতিও হইবেন;
  • সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলীয়া, ঢাকা এর অধ্যক্ষ বা তাহার মনোনীত উক্ত মাদ্রাসার একজন অধ্যাপক;
  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক মনোনীত উক্ত অধিদপ্তরের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বা নির্বাহী প্রকৌশলী;
  • মহাপরিদর্শক নিবন্ধন কিংবা তৎকর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি;
  • ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত অনূর্ধ্ব উপ-সচিব পদমর্যাদার দুইজন কর্মকর্তা;
  • আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক মনোনীত উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
  • সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
  • ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
  • ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক কর্তৃক মনোনীত উক্ত ফাউন্ডেশনের একজন মুফতি;
  • উপ-ধারা (২) অনুসারে নির্বাচিত ০৩(তিন) জন মোতাওয়াল্লী;

বাংলাদেশ মোতাওয়াল্লী সমিতির (যদি জাতীয়ভাবে স্বীকৃত অনুরূপ কোন সমিতি থাকে) সভাপতি বা তাহার মনোনীত উক্ত সমিতির একজন প্রতিনিধি, অথবা মোতাওয়াল্লী সমিতি না থাকিলে ওয়াক্‌ফ প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত কোনো ওয়াক্‌ফ এর একজন মোতাওয়াল্লী;

ওয়াক্‌ফ প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত তাহার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা, যিনি কমিটির সদস্য- সচিব হিসাবেও দায়িত্ব পালন করিবেন।

ওয়াক্‌ফ প্রশাসনকে জাতীয়ভাবে পর পর সর্বশেষ তিন বছর গড়ে সর্বোচ্চ চাঁদা প্রদানকারী ২০ (বিশ) টি ওয়াক্‌ফের মোতাওয়াল্লীগণ যৌথভাবে তাঁহাদের পছন্দনীয় ০৩(তিন) জন মোতাওয়াল্লীকে বিশেষ কমিটির সদস্য হিসাবে নির্বাচন করিবেন।

উপ-ধারা (১) এর অধীন গঠিত বিশেষ কমিটির মেয়াদ হইবে গঠিত হইবার তারিখ হইতে ৩(তিন) বছর, তবে নতুন কমিটি পুনর্গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান বিশেষ কমিটি দায়িত্ব পালন করিয়া যাইবে।

 বিশেষ কমিটির কোন সদস্য, উপযুক্ত কারণ ব্যতিরেকে, কমিটির পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকিলে, তাহার সদস্য পদ শূন্য হইবে।

বিশেষ কমিটির মেয়াদকালে কমিটির কোনো সদস্য পদ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে শূন্য হইলে, উক্ত শূন্য পদ সাময়িক বা, ক্ষেত্রমত, অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য স্থায়ীভাবে পূরণ করা যাইবে।

বিশেষ কমিটির কার্যাবলী ও ক্ষমতা

কোনো ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির বিক্রয়, দান, বন্ধক বিনিময়, ৫ (পাঁচ) বছরের অধিক মেয়াদের জন্য ইজারা প্রদান এবং অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তর করিবার ক্ষেত্রে বিশেষ কমিটি এই আইন ও তদ্‌ধীন প্রণীত বিধি-বিধানের আলোকে সুপারিশ করিবে।

উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত যে কোন সুপারিশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হইতে হইবে।

বিশেষ কমিটির কোন সদস্য, ওয়াক্‌ফ প্রশাসক ব্যতীত, নিজেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য আবেদনকারী হইয়া থাকিলে, তিনি বিশেষ কমিটির সংশ্লিষ্ট সভায় অংশগ্রহণ পারিবেন না।

বিশেষ কমিটির সভা

 অন্যূন ৯ (নয়) জন সদস্যের উপস্থিতিতে বিশেষ কমিটির সভার কোরাম হইবে।

 কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে; এবং মতামতের সমতার ক্ষেত্রে সভাপতির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকিবে।

দানের মাধ্যমে হস্তান্তর

ধারা ৫ এ ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি অন্য কোন ওয়াক্‌ফ এস্টেট বা, মুনাফার ভিত্তিতে পরিচালিত নয়, এমন কোন ধর্মীয়, শিক্ষা বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানকে দান করা যাইবে।

এই ধারার অধীন দান এর প্রস্তাব কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত ও মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হইতে হইবে।

কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই ধারার অধীন কোন সম্পত্তি দান এর মাধ্যমে প্রদত্ত ও গৃহীত হইয়া থাকিলে উক্ত উদ্দেশ্য বহির্ভূত অন্য কোন উদ্দেশ্যে উক্ত সম্পত্তি ব্যবহার করা যাইবে না।

উপ-ধারা (৩) এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া কোন সম্পত্তি নির্ধারিত উদ্দেশ্য বহির্ভূত অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হইলে, বা ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হইলে, ওয়াক্‌ফ প্রশাসক অধ্যাদেশ এর ধারা ৩৪ এর অধীন উক্ত সম্পত্তি নিজ নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করিতে পারিবেন।

অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তর

 কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তর করা যাইবে।

এই আইনের অধীন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির হস্তান্তর বিশেষ কমিটির সুপারিশ ও সরকারের অনুমোদনের ভিত্তিতে করিতে হইবে।

 এই আইনের অধীন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে রিয়েল এষ্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ১০ এর বিধান অনুযায়ী ভূমি-মালিক ও ডেভেলপার এর মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করিতে হইবে; এবং এতদুদ্দেশ্যে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত মোতাওয়াল্লী বা, ক্ষেত্রমত, ওয়াক্‌ফ প্রশাসক ভূমি-মালিক হিসাবে গণ্য হইবেন।

 একজন ভূমি-মালিক নিজ ভূমির ক্ষেত্রে নিজ স্বার্থ রক্ষা করিয়া যেরূপ শর্তে ডেভেলপারের সহিত চুক্তি করেন, এই ধারার অধীন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তর করিবার ক্ষেত্রে মোতাওয়াল্লী বা, ক্ষেত্রমত, ওয়াক্‌ফ প্রশাসক সেরূপ শর্তে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বা উহার স্বত্বভোগীদের (beneficiary) স্বার্থ রক্ষা করিয়া ডেভেলপারের সহিত চুক্তি সম্পাদন করিবেন।

এই ধারার অধীন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হস্তান্তর করিবার ক্ষেত্রে উন্নয়ন কার্যক্রমের সকল পর্যায়ে ওয়াক্‌ফ প্রশাসকের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ থাকিবে এবং চুক্তিতে তাহা উল্লিখিত থাকিবে এবং সংশ্লিষ্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সম্পত্তির উন্নয়ন হইতেছে কিনা এবং ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বা উহার স্বত্বভোগীদের (beneficiary) প্রয়োজন, কল্যাণ ও স্বার্থ যথাযথভাবে সংরক্ষিত হইতেছে কিনা ওয়াক্‌ফ প্রশাসক তাহা নিশ্চিত হইবেন ।

এই ধারার অধীন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের মাধ্যমে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে রিয়েল এষ্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর অন্যান্য বিধানাবলী, যতদূর সম্ভব, প্রযোজ্য হইবে।

এই ধারার অধীন অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তর কেবল তফসিলে বর্ণিত কোন এলাকায় অবস্থিত ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে।

হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দরপত্র আহবানের বাধ্যবাধকতা

 কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির বিক্রয় বা ৫(পাঁচ) বছরের অধীক মেয়াদের জন্য ইজারা প্রদান বা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তর করিবার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করিতে হইবে।

কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির বিক্রয় বা ৫(পাঁচ) বছরের অধীক মেয়াদের জন্য ইজারা প্রদানের প্রস্তাব সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হইবার পর, হস্তান্তরের জন্য নির্ধারিত উক্ত সম্পত্তির স্থানীয় মূল্য, সরকার নির্ধারিত প্রচলিত বাজার দর অনুযায়ী ১০(দশ) লক্ষ টাকার অধিক হইলে, জাতীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র আহবানের মাধ্যমে উক্ত বিক্রয় বা ইজারা সম্পাদন করিতে হইবে, অন্যথায় স্থানীয়ভাবে দরপত্র আহবান বা উন্মুক্ত নিলাম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তান্তর সম্পাদন করা যাইবে।

উপ-ধারা (১) এর অধীন অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৫ এর অধীন নিবন্ধিত রিয়েল এষ্টেট ডেভেলপারের মধ্য হইতে অন্যূন ১০ (দশ) এবং অনূর্ধ ১৫ (পনের) টি প্রাক-উপযুক্ত (prequalified) ডেভেলপারের একটি প্যানেল নির্বাচন করিয়া নির্ধারিত সময়ের জন্য সংরক্ষণ করিতে হইবে।

এই ধারার অধীন কোন দরপত্র বা নিলামে উদ্ধৃত বা প্রস্তাবিত দর যোগসাজসী বা অস্বাভাবিকভাবে কম প্রতীয়মান হইলে ওয়াক্‌ফ প্রশাসক, বা ক্ষেত্রমত, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, ওয়াক্‌ফের স্বার্থে, উক্ত নিলাম বা দরপত্র বাতিল করিতে পারিবে।

উন্নয়নের জন্য অর্থায়নের পদ্ধতি

ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি উন্নয়নের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে অর্থায়ন করা যাইবে, যথাঃ –

  • ওয়াক্‌ফ প্রশাসনের নিজস্ব তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ দ্বারা;
  • ওয়াক্‌ফের নিজস্ব তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে;
  • সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদানের মাধ্যমে;
  • ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে;
  • দোকানদার বা ভাড়াটিয়াদের নিকট হইতে জামানত বা সালামীর অর্থ অথবা অগ্রিম ভাড়ার টাকা গ্রহণের মাধ্যমে;
  • দোকানঘর, আবাসিক ফ্ল্যাট বা বাণিজ্যিক স্পেস এর পজেশন বিক্রয়ের মাধ্যমে;
  • ডেভেলপারের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে; এবং
  • কোন বিদেশী রাষ্ট্র বা সংস্থার অর্থ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, বিনিয়োগের মাধ্যমে।

স্বীয় উদ্যোগে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির উন্নয়ন

কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য কোন রিয়েল এস্টট ডেভেলপার এ সাথে কোন চুক্তি না করিয়া, উহার নিজস্ব অর্থে বা অনুমোদিত কোন উৎস হইতে সংগৃহীত পুঁজি বা গৃহীত ঋণ লগ্নি করিয়া এবং ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির মালিকানা অক্ষুন্ন রাখিয়া উক্ত ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বা উহার অংশ উন্নয়ন করিলে এই আইনের কোন বিধান প্রযোজ্য হইবে না।

ওয়াক্‌ফ প্রশাসকের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ

ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির হস্তান্তর সংশ্লিষ্ট ওয়াক্‌ফের বা উহার স্বত্বভোগীদের (beneficiary) প্রয়োজনে, কল্যাণে ও স্বার্থে এবং সংশ্লিষ্ট ওয়াক্‌ফের উদ্দেশ্যের সহিত সংগতিপূর্ণ কিনা, এবং বিশেষ করিয়া কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বন্ধক রাখিয়া কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে গৃহীত ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হইতেছে কিনা ওয়াক্‌ফ প্রশাসক তাহা কঠোরভাবে পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করিবেন।

কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বন্ধক রাখিয়া ঋণ গ্রহণ করিবার ক্ষেত্রে বিশেষ কমিটি বন্ধক প্রস্তাব সুপারিশ করিবার পূর্বে কঠোরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করিয়া নিশ্চিত হইবে যে, গৃহিতব্য ঋণ সিডিউল অনুযায়ী পরিশোধ করা সম্ভব হইবে।

অপরাধ

 এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালন করিবার ক্ষেত্রে-

  • বিশেষ কমিটির কোন সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে নিজে অবৈধভাবে লাভবান হইবার বা অন্য কাহাকেও অবৈধভাবে লাভবান করাইবার উদ্দেশ্যে কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বা উহার স্বত্ত্বভোগীদের (beneficiary) স্বার্থের পরিপন্থী কার্য করিয়া থাকিলে, বা
  • কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত মোতাওয়াল্লী, রিসিভার বা সরকারী কর্মকর্তা এই আইনের অধীন বিশেষ কমিটির সুপারিশ ও সরকারের অনুমোদন গ্রহণ ব্যতিরেকে কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হস্তান্তর করিলে, বা
  • কোন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত কোন ব্যক্তি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির হস্তান্তরলব্ধ অর্থ ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বা উহার স্বত্ত্বভোগীদের (beneficiary) যেরূপ প্রয়োজনে, কল্যাণে ও স্বার্থে সম্পাদন করা হইয়াছে, অনুরূপ প্রয়োজনে, কল্যাণে ও স্বার্থে ব্যবহার না করিয়া ধারা ৬ এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করিলে, তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।

কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত অপরাধ করিলে তিনি অনুর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।

তদন্ত ও বিচার পদ্ধতি

এই আইনের অধীন তদন্ত, বিচার ও আপীল ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী হইবে।

অপরাধের অ-আমলযোগ্যতা ও জামিনযোগ্যতা

ফৌজদারী কার্যবিধিতে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ অ-আমলযোগ্য (non-cognizable) এবং জামিনযোগ্য (bailable) হইবে।

অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ ও বিচার

ওয়াক্‌ফ প্রশাসক কিংবা তাহার নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ব্যতিরেকে কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারার্থ আমলে গ্রহণ করিবে না।

সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে ওয়াক্‌ফ প্রশাসক এর বিরুদ্ধে কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারার্থ আমলে গ্রহণ করিবে না।

বার্ষিক প্রতিবেদন

ওয়াক্‌ফ প্রশাসক, প্রতি ইংরেজী বৎসরে এই আইনের অধীন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির হস্তান্তরের একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদন পরবর্তী ইংরেজী বৎসরের ৩১ মার্চ তারিখের মধ্যে সরকারের নিকট প্রেরণ করিবেন।

উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রতিবেদনে, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, হস্তান্তরিত সম্পত্তির বিবরণ ও পরিমাণ, হস্তান্তর মূল্য, হস্তান্তরের উদ্দেশ্য, হস্তান্তরের তারিখ, হস্তান্তরের সুপারিশ ও অনুমোদনের তারিখ, ইত্যাদি উল্লেখ থাকিবে।

অস্পষ্টতা দূরীকরণ

এই আইনের কোন বিধান কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোন অস্পষ্টতা দেখা দিলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, উক্তরূপ অস্পষ্টতা দূর করিতে পারিবে।

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা

এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা

এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ওয়াক্‌ফ প্রশাসক, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন বা তদ্‌ধীন প্রণীত কোন বিধির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে, প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবেন।  

তফসিল সংশোধনের ক্ষমতা

সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, তফসিল সংশোধন করিতে পারিবে।  

আইনের ইংরেজি পাঠ

এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনুদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।

বাংলা পাঠ ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।

সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী বিপিএএ

Add comment

error: Content is protected !!