অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (পণমূল্যের বিনিময়ে) দলিলের রেজিস্ট্রি খরচসহ অন্যান্য তথ্য

Last Updated on 15/07/2023 by সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী বিপিএএ

মাত্র কয়েকটি ক্লিকে যে কোন দলিলের রেজিস্ট্রি খরচের হিসাব বের করুন “দলিল ফিস ক্যালকুলেটর” মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।

“দলিল ফিস ক্যালকুলেটর” মোবাইল অ্যাপটি ফ্রি ইন্সটল করতে এখানে ক্লিক করুন।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নিঃ- পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন, ২০১২ এর ২ (১) ধারা অনুসারে, “পাওয়ার অব অ্যাটর্নি” অর্থ এমন কোন দলিল যাহার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তাহার পক্ষে উক্ত দলিলে বর্ণিত কার্য-সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোন ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা অর্পণ করেন।”

মনে রাখবেন, এই দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না। তাই দলিল গ্রহিতা তার নিজ নামে সম্পত্তি নামজারি বা খারিজ করতে পারবেন না। অর্থাৎ এই দলিলমূলে কেউ সম্পত্তির মালিকানা দাবী করতে পারেন না, দলিল গ্রহিতা কেবল দাতার পক্ষে দলিলে উল্লিখিত কার্য সম্পাদন করতে পারেন।

অনেকেই এই দলিলকে “আমমোক্তারনামা দলিল” বলে থাকেন। কিন্তু আইন ও বিধিমালার কোথাও “আমমোক্তারনামা” শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। তাই বাংলায় “পাওয়ার অব অ্যাটর্নি” কিংবা ইংরেজিতে “Power of Attorney” লেখাই যুক্তিযুক্ত।

অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নিঃ- পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন, ২০১২ এর ২ (৪) ধারা অনুসারে, “অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি” অর্থ স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে, বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের বা ঋণ গ্রহণের বিপরীতে স্থাবর সম্পত্তির বন্ধক প্রদানের জন্য প্রদত্ত কোন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অথবা স্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে পণ মূল্য গ্রহণের বিনিময়ে ভূমি উন্নয়নসহ উক্ত দলিল সম্পাদনের ক্ষমতা প্রদান সম্পর্কিত কোন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি।

অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (পণমূল্যের বিনিময়ে) দলিলের রেজিস্ট্রি খরচসহ অন্যান্য তথ্যঃ-

রেজিস্ট্রেশন ফিঃ দলিলে উল্লিখিত পণমূল্যের ২% টাকা। তবে ১০০ টাকার নিম্নে কিংবা ৪০,০০০ টাকার উর্ধে হবে না

দলিলের মূল্য ২৪,০০০ টাকা বা তার কম হলে নগদ অর্থে এবং ২৪,০০০ টাকার বেশি হলে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক লিঃ এ, কোড নং ১-২১৬১-০০০০-১৮২৬ তে জমা করে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

স্টাম্পশূল্কঃ দলিলে উল্লিখিত পণমূল্যের ১.৫% টাকা। তবে ১০,০০০ টাকার কম এবং ১,০০,০০০ টাকার উর্ধে হবে না (১৮৯৯ সালের স্টাম্প আইনের ১ নম্বর তফশিলের ৪৭ই নম্বর ক্রমিকে উল্লিখিত বর্ণনা অনুসারে)।

দলিলে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্টাম্প ব্যবহার করা যাবে। স্টাম্প খাতের বাকি অর্থ স্থানীয় সোনালী ব্যাংক লিঃ এ কোড নং ১-১১০১-০০২০-১৩১১ তে জমা করে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

এছাড়া পণমূল্যের বিনিময়ে অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রি করতে যা যা লাগবে–

১। ৩০০ টাকার স্টাম্পে হলফনামা।

২। ই- ফিঃ- ১০০ টাকা।

৩। ঢ- ফিঃ-

  • দলিলের প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা

৪। (নকলনবিশগনের পারিশ্রমিক) ঢঢ ফিসঃ-

  • দলিলের প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ৩৬ টাকা

৫। সম্পত্তি হস্তান্তর নোটিশের আবেদনপত্রে ১০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি।

৬। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার ১০,০০,০০০ (দশ লক্ষ) টাকার বেশি মূল্যের জমি, বিল্ডিং বা এপার্টমেন্ট এর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) দলিল রেজিস্ট্রিতে আয়কর রিটার্ণ দাখিলের প্রমাণক দাখিল করতে হবে।

মন্তব্যঃ-

১। ঢ- ফি ও ই- ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি এর সাথে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করুন।

২। ঢঢ- ফি নগদে রেজিস্ট্রি অফিসে জমা করতে হবে।

৩। সরকার নির্ধারিত হলফনামা, ৩০০ টাকার স্টাম্পে প্রিন্ট করে মূল দলিলের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

বিঃদ্রঃ

১। অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮, এর ৫২এ ধারা প্রযোজ্য।

২। সিটি কর্পোরেশন বা জেলা সদরের পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত এক লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে ই-টিন বাধ্যতামূলক।

৩। পণমূল্য হচ্ছে- কোন ভূমি উন্নয়নের নিমিত্ত অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার গ্রহিতা যে অংশ বিক্রয় বা হস্তান্তরের ক্ষমতা প্রাপ্ত হন উহার বাজার মূল্য এবং পাওয়ার দাতা কর্তৃক গৃহীত কোন অর্থ, যদি থাকে, যাহা দলিলের মূল্য হিসেবে গণ্য হয়।

৪। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতা অর্পনে সীমাবদ্ধতাঃ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা, ২০১৫ এর ৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের উদ্দেশ্য পুরনকল্পে, এই বিধিমালার অধীন পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে নিম্নবর্ণিত বিষয়ে কোন ক্ষমতা অর্পণ করা যাবে না, যথা-

  • উইল সম্পাদন, বা দাতা কর্তৃক সম্পাদিত উইল রেজিস্ট্রির উদ্দেশ্যে দাখিলকরন;
  • দত্তক গ্রহনের ক্ষমতাপত্র সম্পাদন; বা দাতা কর্তৃক সম্পাদিত দত্তক গ্রহনের ক্ষমতাপত্র রেজিস্ট্রির উদ্দেশ্যে দাখিলকরন;
  • দান বা হেবা সম্পর্কিত ঘোষণা সম্পাদন;
  • ট্রাস্ট দলিল সম্পাদন; এবং
  • সরকার কর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, ঘোষিত অন্য প্রকার দলিল বা কার্য সম্পাদন।

৫। রেজিস্ট্রেশন আইনের ৫২এ ধারা নিম্নরূপঃ

[কোন স্হাবর সম্পত্তির বিক্রয় দলিল দাখিল করা হলে, যে পর্যন্ত নিম্নবর্ণিত বিবরনাদি দলিলে অন্তর্ভূত এবং দলিলের সহিত সংযুক্ত না করা হয়, সেই পর্যন্ত নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা দলিলটি নিবন্ধন করবেন না, যথা-

  • বিক্রেতা যদি উত্তরাধিকারপ্রাপ্তি  ব্যতিত অন্যভাবে সম্পত্তির মালিক হইয়া থাকেন, তাহলে “রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০” এর অধীন তার নামে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ান;
  • বিক্রেতা যদি উত্তরাধিকার প্রাপ্তিতে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর অধিন তার নামে অথবা তার পূর্বসূরির নামে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ান;
  • সম্পত্তির প্রকৃতি ;
  • সম্পত্তির মূল্য;
  • সীমানা ও চৌহদ্দিসহ সম্পত্তির একটি নকশা;
  • সম্পত্তির মালিকানার গত ২৫ (পঁচিশ) বৎসরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা; এবং
  • এই দলিল সম্পাদনের পূর্বে সম্পাদনকারী সম্পত্তিটি কোন ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করেন নাই এবং উহাতে তাহার বৈধ স্বত্ব বহাল আছে মর্মে দৃঢ়ভাবে ঘোষনা করিয়া একটি হলফনামা।]

৬। স্ট্যাম্প আইন, ১৮৯৯ এর ৫ নম্বর ধারায় Instruments relating to several distinct matters প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, Any instrument comprising or relating to several distinct matters shall be chargeable with the aggregate amount of the duties with which separate instruments, each comprising or relating to one of such matters, would be chargeable under this Act.

সাব-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী বিপিএএ

Add comment

error: Content is protected !!